অনেকে ভাবে এ পাড়ায় আইনের নামে যত রাজ্যের বে-আইনী কাজ হয়। উকিলেরা মিথ্যা কথা বলে, এটর্নিরা সুযোগ পেলেই মক্কেলকে শোষে। ভাই-এ ভাই-এ মোকাদ্দমায় দুইজনেই পথে বসে, মাঝখান দিয়ে এটর্নিরা কলকাতায় বাড়ি তোলে। কথাগুলো যে সবসময় মিথ্যা তা নয়, কিন্তু সবাই এখানে কিছু চোর ডাকাত নয়। এখানে অনেক মানুষ আছেন যারা জীবনে কখনো মিথ্যার আশ্রয় নেননি। সততাই তাদের জীবনের একমাত্র মূলধন। উড্রফ, স্যার গ্রিফিথ ইভান্স, উইলিয়াম জ্যাকসনের মত আইনিবিদরা যে কীর্তি রেখে গেছেন, আমাদের বারওয়েল সায়েব তার শেষ বর্তিকাবাহী। কলকাতা হাইকোর্টের শেষ ইংরেজ ব্যারিস্টার। অষ্টাদশ শতাব্দীতে যার শুরু, বিংশ শতাব্দীর মধ্যাহ্নে যার অবসান।

নোয়েল ফ্রেডরিখ বারওয়েল ছিলেন কলকাতা হাইকোর্টের সর্বশেষ ইংরেজ ব্যারিস্টার, বিখ্যাত বারওয়েল বংশের আলোকবর্তিকা। এই বংশ ক্লাইভের আমল থেকেই ভারতবর্ষে ছিল, নানা ভাবে নানা পেশায় নানা সময়ে। আমাদের অতিপ্রিয় লেখক শংকর ছিলেন প্রথম জীবনে তার সহকারী। আইনজীবি হিসেবে নয়, বরং চেম্বার ক্লার্ক হিসেবে। ওল্ড পোস্ট অফিস রোডের পুরনো সেই টেম্পল চেম্বারের কক্ষে বসে বারওয়েল সাহেব কখনো খুলে বসতেন তার বিশাল অভিজ্ঞতার ঝুলি, কখনো বা মক্কেলের নিজের মুখেই শংকর শুনে নিতেন মানবজীবনের জটিলতম সমস্যার সব দুঃখগাথা। এর কিছু অংশ নিয়েই অমর এই সৃষ্টি, কত অজানারে !!! প্রতিটি আইনের ছাত্র কিংবা বিবেকবান মানুষের জন্য এইটি একটি অবশ্যপাঠ্য বই।

মেরিয়ন স্টুয়ার্ট, লেবাননে জন্ম। মা ভাগ্যের ফেরে আদিম পেশাটি বেছে নিলেও মেয়েকে মানুষ করতে চেয়েছিলেন, তাই তার নাম দিলেন আভা স্টুয়ার্ট। প্রথম জীবনে লেবাননেই হাওয়ার্ড নামের এক ইংরেজ সেনা অফিসারের কাছে প্রেমে প্রত্যাখ্যাত এবং রক্ষিতা হিসেবে ব্যবহৃত হবার পর অনেক কাঠ-খড় পুড়িয়ে মহিলা একাকী এসে নামলেন মুম্বাইয়ে, নাম নিলেন মেহেরুন্নিসা। এইখানে এক পূর্ব দেশীয় রাজার সেনাপতির সাথে পরিচয় হলো তার, যার নাম মহিউদ্দিন। তাকেই বিয়ে করে সুখের সন্ধান পেতে চাইলেন, কিন্তু বাধ সাধলেন রাজামশাই নিজে। বিদেশী মহিলা, এ তো সাক্ষাৎ স্পাই। ফরমান জারী হলো, হয় একে ছাড়ো, নয় চাকরী ছাড়ো। সেনাপতি মহোদয় অশেষ সাহসের পরিচয় দিয়ে মেহেরুন্নিসাকে রেল স্টেশনে নামিয়ে দিয়ে এলেন, একটি টিকিটও কিনে দিলেন। লেবানিজ এই কন্যা হাল ছাড়ার পাত্র ছিলেন না। আরেকজন রাজকুমারের মন ভিজে উঠলো তাকে দেখে, এইবার হিন্দু ধর্ম গ্রহণ করলেন তিনি, নাম হলো রাণী মীরা আদিত্যনারায়ণ। চন্দ্রগড়ের রাজকুমারের হেরেম ঠাই পেলেন শেষ পর্যন্ত। চিঠি লিখে বারওয়েল সাহেবকে তার শেষ কৃতজ্ঞতাটি জানাতে ভোলেননি।

এই মহিলার ব্যাপারে কি আপনার জাজমেন্ট? অসৎ, খারাপ, নষ্টা এক মহিলা নাকি সংগ্রামী এবং হার না মানা অসাধারণ শক্ত এক নারীচরিত্র ?

ব্যারিস্টার বীরেন বোস ছিলেন প্রাণোচ্ছল একজন তরুণ, বিলেতের সাদা তরুণীদের হৃদয়ে কাঁপন ধরানো জনপ্রিয় এবং আমুদে এক আইনের ছাত্র। কেমব্রিজে পড়াকালীন বারওয়েল সাহেবের সহপাঠী ছিলেন তিনি, সেই থেকে তাদের মধ্যে গভীর বন্ধুত্ব। এমিলি ডেবেনহ্যাম নামক এক মেয়েকে বিয়ে করে দেশে ফিরলেন, বাবা তাকে ঘরে স্থান দিলেন না। এদিকে আবার নাক উচো বিলিতি বৌয়ের ভারতীয় আবহাওয়া সহ্য হলো না, তাই তিনি ব্যাপক উচ্ছৃঙ্খল জীবন-যাপন শুরু করলেন। ক্লাব- পার্টি আর মদে চুর হয়ে থাকা এই মেমসাহেবের সকল খরচ তরুন ব্যারিস্টার বীরেন বোসই দিতেন। এইসকল কারণে তিনি পেশাতেও মনোযোগ দিতেন খুব কম। মক্কেলকে সময় দিয়ে কোর্টে হাজির হতেন না, আরও নানান সব পাগলামি তার মধ্যে ছিল। এক পর্যায়ে তাদের দুইজনের সম্পর্ক হয়ে গেল স্রেফ টাকার। হতাশায় আক্রান্ত ব্যারিস্টার বোস নিজেও মদের বোতলে জীবনের অর্থ খুজতে ব্যস্ত হয়ে পড়লেন, তার জীবনমানের ব্যারোমিটারের পারা ক্রমশই নামতে থাকলো নিচে, আইন ব্যবসা পুরোপুরি লাটে উঠলো। দামী স্যুট ছেড়ে সস্তা স্যুট, সস্তা কাপড়ের ওপর তালির পর তালি পড়তে থাকলো। অথচ আত্নাভিমান টনটনে, ইংরেজী উচ্চারণ এখনোও পরিস্কার, এবং তাকে দেখে অ্যাংলো ইন্ডিয়ান ভিখারী বলে ভুল করাটা খুবই স্বাভাবিক। পরিচয় চাইলে সাথে সাথেই কার্ড বের করে দেবেন,

বি কে বোস,

ব্যারিস্টার অ্যাট ল

কলকাতার রাস্তায় ভরদুপুরে ছোলাভাজা খেয়ে ক্ষুধা মেটানো এই আইনজীবিকে দেখে তরুণ শংকরের মনে যে আঘাত লাগে, সেটা পাঠকমাত্রই অনুধাবন করবেন। ভাগ্যাহত সেই লোকটার জন্য করুণায় হৃদয় সিক্ত হবে সকলেরই।

বীরেন বোসের জীবনে ছিল কিছু না পাবার বেদনা, আর কলকাতা হাইকোর্টের জাঁদরেল ব্যারিস্টার সুব্রত রায়ের জীবনে ছিল সব পাবার শূন্যতার হাহাকার। তরুণ বয়সে অসম্ভব স্ট্রাগল করে উঠেছিলেন তিনি। স্ত্রী দিপালী কিংবা পরিবারের প্রতি ভ্রূক্ষেপ করবার সময় পর্যন্ত মিলতো না তার। ব্যারিস্টার উইলমট ড্যানিয়েল রেম্পিনি ছিলেন তার গুরু, যার জীবনের ধ্যান জ্ঞান লক্ষ্য ছিলো শুধুমাত্র আইন, আইন এবং আইন। সুব্রতকেই তিনি বেছে নিয়েছিলেন তার আইন সাম্রাজ্যের উত্তরাধিকার হিসেবে, পরিণামে সুব্রত ছেড়ে দিয়েছিল তার ব্যক্তিগত জীবন, সুখ, স্ত্রীর ভালোবাসা আর সন্তানবাৎসল্য। একটি একটি মামলায় সুব্রতকে দাঁড় করিয়ে দিয়ে তার প্রতিপক্ষের আইনজীবি হিসেবে রেম্পিনি সাহেব নিজেই দাঁড়াতেন। যথারীতি সুব্রত হারতো, রেম্পিনি তাকে ভুলগুলো ধরিয়ে দিতেন, এবং বলতেন তাকে জিততেই হবে। এই মামলায় জেতার তীব্র ইচ্ছাই তাকে কঠোর থেকে কঠোরতম পরিশ্রমে বাধ্য করে, আইন জগতের দুয়ারগুলো একে একে তার সামনে খুলতে থাকে। প্রথম প্রথম দুই পৃথিবীর মধ্যে দোদুল্যমান ছিল তার বাঙ্গালী মন, কিন্তু সফলতার ছোয়া যত দৃঢ় হচ্ছিলো, পারিবারিক বন্ধনও তত শিথিল হচ্ছিল। স্ত্রী দূরে দূরে থাকেন, ছেলেমেয়েরা ভয়ে তার কাছে ঘেঁষে না। কোন এক ছুটির দিনে সবাইকে কাছে ডেকে একটু আমোদ করতে চাইলে তারা ভাবে, বাবা কি পাগল হয়ে গেল?

প্রৌড় অবস্থায় এসে তুখোড় আইনজীবি হিসেবে নাম করা সুব্রত রায় অনুভব করতে পারেন, তার জীবনে কি যেন নেই। এই নেশা ধরানোর জন্য কে দায়ী, তার গুরু ব্যারিস্টার ডব্লিউ ডি রেম্পিনি ? রেম্পিনি সাহেবের নিজের জীবন যে আরও রোমাঞ্চকর !

লন্ডনের তুখোড় ব্যারিস্টার স্যার হেনরির চেম্বারে কাজ করতেন হতদরিদ্র বালক রেম্পিনি। চেম্বারের টেবিল পরিস্কারের ফাকে সময় পেলেই পড়তেন কেস, ল রিপোর্ট আর নথিপত্র। একবার এক জটিল মামলার ড্রাফট তৈরির সময় একটা কেস রেফারেন্সের খোজে পুরো চেম্বারের সকল আইনজীবি বিনিদ্র রাত কাটাচ্ছিলেন। দুরু দুরু বুকে বালক রেম্পিনি স্যার হেনরির হাতে তুলে দিলেন সেই কেস। এরপরের সব ইতিহাস, স্যার হেনরি তাকে ব্যারিস্টারি পড়ালেন। সময়ের ফেরে দরিদ্র সন্তান রেম্পিনি হয়ে উঠলেন ভারতীয় হাইকোর্টের অন্যতম সেরা আইনজীবি। স্যার হেনরী তার নিজের কালো গাউন দিয়ে গিয়েছিলেন রেম্পিনিকে। আইন পেশা থেকে অবসর নেবার আগে রেম্পিনি সাহেবও শতচ্ছিন্ন সেই গাউন দিয়ে গিয়েছিলেন সুব্রত সেনকে। বলেছিলেন, যখন কোন কেসে খুব বিব্রত মনে হবে, তখন এই গাউনটা পরে নিও !!! বার লাইব্রেরীতে বসে এই গল্প যিনি শংকরকে বলছিলেন, তিনি ইতি টানলেন এই বলে যে, ঐ কালো গাউনের মোহ বহু ব্যারিস্টারকে তাদের সংসার থেকে অনেক দূরে নিয়ে গিয়েছে।

আমাদের সায়েবদের আসল বিয়ে তো ঐ কালো গাউনের সঙ্গেই !!!

Kolkataকোলকাতা হাইকোর্ট

ইংরেজ কন্যা হেলেন গ্রুবার্ট এর সাথে বাঙ্গালী যুবক সুরজিত রায়ের ভালোবাসার লড়াই, কিংবা অবস্থাপন্ন ঘরের ভাগ্যবিড়ম্বিতা বাঙ্গালী মেয়ে সুনন্দা দেবীর মামলা, কিংবা হতদরিদ্র নির্যাতিতা বালিকা আরতি রায়ের অশ্রুপূর্ণ অপেক্ষার গল্পগুলো শুধুমাত্র ভারতীয় সমাজে নারীদের অবস্থান এবং পৌরুষের বাগাড়াম্বরের চিত্র আইনের চোখ দিয়ে আমাদের দেখায়। প্রতিটি ক্ষেত্রেই বারওয়েল সাহেব মানবিকতার সর্বোত্তম পর্যায়ে পৌঁছে গিয়ে আইনের মধ্যে থেকে ন্যায়টাকে বের করে এনেছিলেন। দুইশো বছরের ইতিহাস সম্বলিত উল্ভারহ্যাম্পটনের জেমস ফ্রেড্রিখ গোল্ড এবং মিস ফিগিনের হৃদয়বিদারক গল্প, কিংবা গ্রীক নাবিক নিকোলাস ড্রলাসের সাথে জাহাজ কোম্পানীর প্রতারণার মর্মান্তিক পরিণতি অথবা শিক্ষিতা বাঙ্গালী চিকিৎসক ডাঃ শেফালী মিত্রের সাথে সোফিয়া নামক এক তরুণীর মাতৃত্ব নিয়ে লড়াইয়ের চিত্রকল্পগুলো আমাদের চেনাজানা পরিবেশ এবং মানুষগুলো সম্পর্কে এক বিশাল ঝাঁকি দেয়, নিমেষে লন্ডভন্ড হয়ে যায় আমাদের সাজানো দৃষ্টিভঙ্গি আর বিচারবোধ। একজন আইনজীবি কিভাবে বুকে পাথর চেপে রেখে এই সমস্যাগুলোর নিরপেক্ষ সমাধানের কথা চিন্তা করেন, তা সাধারণ কোন মানুষের পক্ষে চিন্তা করাও অকল্পনীয় হয়ে দাঁড়ায়।

বারওয়েল সাহেব ছিলে কোলকাতা হাইকোর্টের শেষ ইংরেজ ব্যারিস্টার, কিন্তু তথাকথিত নেটিভ বাংলার মানুষের প্রতি তার অপরিসীম ভালোবাসার কথা শংকর তুলে এনেছেন চট্টগ্রামের অগ্নিযুগের বিপ্লবী রবীন্দ্র কলিতার গল্পে। থানা হাজতে বন্দী থাকা অবস্থায় অত্যাচারী দারোগাকে নিজ হাতে হত্যা করে এই তরুণ, এবং সগৌরবে কোর্টের সামনে স্বীকার করে তা। বারওয়েল সাহেব অনেক চেষ্টা করেছিলেন, বড়লাট পর্যন্ত গিয়েছিলেন কিন্তু তাতে কোন লাভ হয়নি। রবীন্দ্র কলিতা ফাঁসিকাঠেই জীবন দেয়। একই ধরণের আরেকটি মামলায় আরেক সত্যবাদী বাঙ্গালী যুবককে বাঁচাতে বরিশাল কোর্টে এসেছিলেন তিনি। জমিজমার মামলাকে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা হিসেবে দেখিয়ে সিদ্ধি হাসিল করতে যাওয়া হিন্দু গোষ্ঠীর বিপক্ষে রুখে দাঁড়ানো সংখ্যালঘু খ্রিস্টান তরুন নরেন মন্ডলকে তিনি বলা যায় নিজ হাতে ফাঁসির কাষ্ঠ থেকে নামিয়ে এনেছেন। শংকরের কলমের জাদুতে সেই ঘটনা জীবন্ত হয়ে ফুটে ওঠে।

Shankarলেখক – মনি শংকর আচার্য, শংকর নামেই যার খ্যাতি

শংকর ছিলেন স্রেফ একজন সহকারী, আদালতের ভাষায় ব্যারিস্টার সাহেবের বাবু। কিন্তু বারওয়েল সাহেব তার সাথে বন্ধুর মতই মিশতেন। তার সাথে একবার গ্রীষ্মকালীন ছুটি কাটাতে যান নৈনিতাল। রাণীক্ষেতের এক গ্রামে গিয়ে সাহেবের প্রতিবেশী মিস ফ্যানি ট্রাইটনের জীবনের অত্যাশ্চার্য দিকগুলোও জানতে পারেন তিনি। নিঃসঙ্গ এই প্রৌড়া কিভাবে স্রেফ অখাদ্য ছবি একে জীবন চালান তা তিনি বুঝতে পারেন, যখন দেখলনে বারওয়েল সাহেব উচ্চমূল্যে এইসব ‘ছবি’ কিনে নিচ্ছেন। এই প্রৌড়ার জীবনের গল্পও সিনেমার মত। ব্রিটিশ সেনাবাহিনীর ক্যাপ্টেন ওয়েন্টওয়ার্থ বনাম ঝোলপুর রাজ্যের নেটিভ যুবরাজের মধ্যে প্রেমঘটিত সংঘর্ষের সেই পুরনো গল্প। ইংরেজ তরুণদের আরাধ্য এই অসাধারণ সুন্দরী তরুণী অজান্তেই মন দিয়ে ফেললেন সুদর্শন ভারতীয় এক যুবরাজকে। এক পরিত্যক্ত কালীমন্দিরে ঘটে যাওয়া দুঃখজনক ঘটনা (ধর্ষণ নয়) শেষ পর্যন্ত সারা জীবনের জন্য তাকে একা করে দেয়। উচ্ছল তরুণী হয়ে গেলেন সমাজচ্যুতা ভাগ্যবিড়ম্বিতা এক বৃদ্ধা, যাকে কেউ সহ্য করতে পারে না।

সব মিলিয়ে, কত অজানারে হচ্ছে এক অসাধারণ উপাখ্যান, ২৫৬ পৃষ্ঠার পরতে পরতে লুকিয়ে থাকা আইনসিদ্ধ জীবনদর্শন। লেখক বারওয়েল সাহেবের শৈশবের একটি গল্প বলেই বইটির সমাপ্তি টেনেছেন, যা মধ্যে মূলত এক কথায় পুরো বইটাই বিবৃত হয়ে গিয়েছে……… লন্ডনে তখন প্রথম এক্স-রে মেশিন আসে। বালক নোয়েল কৌতূহলী হয়ে দেখতে গেলেন, কান্ড দেখে তিনি অবাক। বিস্ময়সুলভ চপলতায় তিনি বলে উঠলেন, এই আলোতে দেহের হাড় পর্যন্ত দেখা যাচ্ছে !!! পাশে দাঁড়িয়ে থাকা এক চীনা ভদ্রলোক তাকে বলেছিলেন, Yes my boy; but only bones. Unfortunately it doesn’t show you your heart.

আইন-বিচার এবং অধিকার আদায়ের লড়াইয়ে রক্ত-মাংস হাড়ের আস্তরণ ভেদ করে হৃদয় পর্যন্ত পৌছবার সাধ্য অনেক আইনজীবিরই হয় না; বেশিরভাগ মানুষ সে পর্যন্ত যাওয়ার কথা চিন্তাও করেন না। অর্থ বা যশের মোহে তাদের দৃষ্টিশক্তি আচ্ছন্ন থাকে, হাতড়ে হাতড়ে জুতসই বিষয়টা খুজে পেলেই তারা বর্তে যান। যারা হৃদয় দিয়ে কাজ করেন, তাদের অন্তরের গভীরে মমতার অন্তঃসলীল ধারা সাধারণের চোখে ধরা না পড়লেও, জহুরী তা চিনতে ভুল করে না।

মানবিকতার এই ফল্গুধারা তাকে সারা জীবন পথ দেখিয়ে নিয়ে যেতে থাকে।

———————————————————-

বইটি যারা পড়বেন বলে মনস্থির করে ফেলেছেন, তারা এখান থেকে নামিয়ে নিন – কত অজানারে