বাংলাদেশে সাধারণ মানুষ উকিল বা আইনজীবি ভাবতেই কেমন যেন একটা কালো কোট আর গলায় ব্যান্ড বাঁধা অতিচালাক ( মানে বাটপার আর কি) টাইপ লোকের কথা চিন্তা করে। ইনফ্যাক্ট, পুরনো বাংলা সিনেমায় শাবানা আর আলমগীরের ‘অবজেকশন ইয়োর অনার’ আর অপরপক্ষের ভিলেন উকিল দেখে টেখে আমার মধ্যেও এরকম একটা দৃষ্টিভঙ্গি কাজ করতো (আইন পড়তে আসার আগে অবশ্যই)। আর এইদিকে বিদেশের আইনজীবি মানেই স্মার্ট, পশ লাইফস্টাইল, দুর্দান্ত বুদ্ধি আর ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করেই ছাড়বে মার্কা একটা ভাব। সেই যে অ্যাটাকাস ফিঞ্চ, এরিন ব্রকোভিচ, ‘টুয়েলভ অ্যাংরি মেন’ এর সাত নম্বর জুরী এর কিংবা হালের স্যুটস বা বোস্টন লিগ্যালে যেমন দেখায়…… আহা !

আমার দুইটা পারসেপশনই ভুল, সেটা ঠেকে শিখতে হলো এই যা।

আমাদের আইনজীবিরা যেমন বিশ্বে সেরা হতে পারেন, হয়েছেন এবং হবেন, বিদেশের আইনজীবিরাও তেমনি মাথা চুলকিয়ে জুতসই লজিক এবং আর্গুমেন্ট হাতড়ে বেড়ান। তবে একটা আগ্রহ ছিল জানার, আসলে তারা কেমন, কিভাবে কাজ করেন। ২০১৪ সালের শুরুতে বাংলাদেশে প্রিমিয়ার লীগের (বিপিএল) ম্যাচ ফিক্সিং কেলেংকারী নিয়ে যে ট্রায়াল হলো, (আশরাফুল এবং ঢাকা গ্ল্যাডিয়েটর্স যেখানে শাস্তি পেয়েছেন) তাতে কাজ করার একটা সুযোগ পেয়েছিলাম, আমার দায়িত্ব ছিল মূলত আইসিসি’র লিগ্যাল ডিপার্টমেন্টের ক’জন বিদেশী আইনজীবির সাথে, তাদের দোভাষী হিসেবেই কাজ করতে হয়েছে বেশি। এদের সম্পর্কে গুগলে কিঞ্চিৎ খোজ খবর করতে গিয়ে পাওয়া গেল দুই জন ‘সেলিব্রেটি’ আইনজীবিকে।

প্রথম ব্যক্তিটি হলেন জোনাথান টেইলর। ইংল্যান্ডের টপ ল ফার্ম Bird and Bird LLP এর পার্টনার এবং স্পোর্টস ল নিয়ে কাজ করা পৃথিবীর অন্যতম সেরা আইনজীবি। স্পোর্টস ল এর মত একটা দুর্দান্ত জিনিস মূলত এদের মত কিছু আইনজীবির হাতেই ডেভেলপ করেছে। এনার ক্লায়েন্টের মধ্যে আছে আইসিসি, বেসবল-রাগবি-লন টেনিসের গ্লোবাল হর্তাকর্তা সহ ইংলিশ প্রিমিয়ার লীগের ক্লাব চেলসি এবং ক্রীড়াঙ্গনে ডোপিং প্রতিরোধক সংস্থা WADA । দুনিয়াজোড়া প্র্যাকটিস এবং লিগ্যাল অ্যাডভাইজিং এর পাশাপাশি লেখালেখিও করেন নিয়মিত, শিক্ষকতাও করেছেন লন্ডনের কিংস কলেজে। আর ”বেস্ট ল’ইয়ার” হিসেবে প্রচ্ছন্ন একটা অহংকারও আছে। (সম্ভবত সেটা থাকাই উচিত)।

দ্বিতীয় জন হলেন ব্যারিস্টার ইয়াসিন প্যাটেল। গুজরাতি বংশোদ্ভুত এই ব্রিটিশ আইনজীবি হলেন সো ফার আমার দেখা কুলেস্ট আইনজীবি ! ব্রিটেনে তিনি একজন বিখ্যাত ক্রিমিন্যাল ডিফেন্স লইয়ার। পাকিস্তানের বাট-আমের-আসিফের স্পট ফিক্সিং মামলায় সালমান বাটের আইনজীবী ছিলেন তিনি, এই ট্রায়ালে অবশ্য তিনি মোহাম্মদ আশরাফুলের আইনজীবি। এছাড়াও মাল্টি মিলিয়ন পাউন্ডের আরবিট্রেশন সহ আরও নানান ধরণের মামলায় তিনি খ্যাতি অর্জন করেছেন। তার চেয়েও বড় কথা হল, ভরা কোর্টে হিয়ারিং চলছে, এর মধ্যেই কিছুক্ষণ পরপরই ক্রিকইনফোতে ঢুকে বিভিন্ন ম্যাচের স্কোর আপডেট দেখে নিচ্ছেন তিনি। নিজের একটা ক্রিকেট ক্লাবও আছে, সেখানে খেলোয়াড় হিসেবেও নেমে যান সুযোগ পেলে। আর ব্যক্তি হিসেবে সদাহাস্যময়, অসাধারণ একজন মানুষ।

ঠাসা শিডিউলে কাজের ফাকে একটু ইনফরম্যাল আড্ডা দেওয়ার সুযোগ পেয়ে তাই আর সেটা হাতছাড়া করলাম না, আর আমাদের আইনের ছাত্র এবং তরুণ আইনজীবিদেরও উপকারে আসতে পারে বিধায় এখানে শেয়ার করছি।

(আড্ডা বা ইনফরম্যাল সাক্ষাৎকার যাই বলি না কেন হয়েছিলো ইংরেজীতে, আমি লিখছি বাংলিশে)

১) জোনাথান টেইলর

JT

যদি সেরাদের কাতারে নিজেকে নিয়ে যেতে চাও, তখন বেশ কিছু জায়গায় ছাড় দিতেই হবে, স্যাক্রিফাইস লাগবে। পরিবার বনাম কাজ, আমার জন্য আমি কাজকেই বেছে নিয়েছি।

# স্যার, নতুন লইয়ার হিসেবে প্র্যাকটিসে ঢুকতে গেলে তাদের প্রতি আপনার সাজেশন কি থাকবে?

জোনাথান টেইলর – আমার মূলনীতি হচ্ছে তিনটা। হার্ড ওয়ার্ক, ইন্টেলিজেন্স এবং জাজমেন্ট। তোমাকে অবশ্যই কঠোর পরিশ্রম করতে হবে, এর কোনই বিকল্প নাই। একই সাথে বুদ্ধিমান হওয়াটাও জরুরী, কিন্তু তার চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে মানুষের জাজমেন্ট। এই বিবেচনাবোধই একজনে মানুষকে অনেকটা এগিয়ে দেয়। ক্লায়েন্টের সাথে, কোর্টের সাথে কিভাবে ডিল করতে হয়, কিভাবে কাজ করতে হবে এর সব কিছুই তোমার খুব ভালোভাবে বিবেচনা করতে হবে।

# আপনার শুরুটা কিভাবে হয়েছিলো?

জোনাথান টেইলর – আমি নিউইয়র্কে প্র্যাকটিস শুরু করি, এবং খুব ছোট ছোট মামলা দিয়েই শুরু করি। আমার মনে পড়ে আমি শুরু করেছিলাম কটন অ্যাকাউন্টিং (Cotton & Company LLP, মার্কিন ল ফার্ম) এর তিনটা ছোট মামলা দিয়ে। এরপর মামলা করতে গিয়ে আমাকে অনেক কিছু জানতে হয়েছে, পড়তে হয়েছে যা আমি নিজেও হয়তো আগে জানতাম না। এভাবেই শুরু করতে হয়।

# আপনি তো নব্বইয়ের দশকে আমেরিকা ছেড়ে ইউকেতে চলে আসলেন, সেখানকার সাথে ওখানে প্র্যাকটিসে কি কোন পার্থক্য আছে? মানে সিভিল ল কমন ল জুরিসডিকশনে………

জোনাথান টেইলর – ওয়েল, আমেরিকা আর ইউকে দু’জায়গাতেই কমন ল; আর ইউরোপের কিছু স্পেসিফিক দেশে সিভিল ল চলে। খুব একটা পার্থক্য নেই, তবে আইনজীবিদের প্র্যাকটিসে এবং কোর্ট কালচারে পার্থক্য আছে।

# বাংলাদেশের আইনজীবিদের কেমন দেখছেন?

জোনাথান টেইলর – বাংলাদেশের আইনজীবিরা ভালো। বিশেষ করে স্পোর্টস ল জিনিসটা এই দেশে একদমই নতুন, সেই হিসেবে তারা ভালোই করছেন। তবে আমার মনে হয় তাদের আরেকটু প্রফেশন্যাল হওয়া উচিত। কারণ দেখ, আমি এখানে সারাদিন কাজ করে আবার হোটেলে গিয়ে মধ্যরাত পর্যন্ত কাজ করি, কিন্তু এখানে কেউ কেউ বলেন যে উনি নাকি মেইলই চেক করতে পারেন নি। এটা দুঃখজনক। তবে, আমার মনে হয়েছে ওভারঅল তারা ভালো।

# স্পোর্টস লকে কেন বেছে নিলেন?

জোনাথান টেইলর – ইটস অলওয়েজ গুড টু স্পেশালাইজ !!! বিশেষ করে তুমি যদি এমন কোন বিষয় বেছে নিতে পারো যেটার উপর আগে কোন কাজ হয়নি, বা খুব কম কাজ হয়েছে তাহলে একটা সময়ে দেখবে ঐ বিষয়ে তুমিই এক্সপার্ট। আমি তোমাকে বলি, কিছুদিন আগে ইয়ান হিগিন্স (আইসিসির লিগ্যাল এফেয়ার্স এর হেড) এর সাথে আমি ক্রিকেটের ম্যাচ ফিক্সিং এর উপর একটা ছোট্ট লেখা লিখেছি, এবং ঐ বিষয়ের ওপর আর কোন কাজ এখন পর্যন্ত কোথাও নেই। তার মানে বুঝতেই পারছো ! আর এটা ইন্টারেস্টিং এটাও একটা কারণ; আমি প্র্যাকটিস করেছি নানা দেশে, মামলা লড়তে অস্ট্রেলিয়া, নিউজীল্যান্ড, সাউথ আফ্রিকা, কানাডা, জাপান, কাতার সহ অনেক অনেক জায়গায় গিয়েছি।

# তার মানে আপনি একজন বড়মাপের স্পোর্টস ফ্যান?

জোনাথান টেইলর – সেটা হয়তো ঠিক, কিন্তু স্পোর্টস ল’কে বেছে নেওয়ার জন্য এটাই একমাত্র কারণ না। আমাকে কেউ যদি এসে বলে আমি স্পোর্টস লইয়ার হবো কারণ আমি খেলাধুলা খুব পছন্দ করি, তাহলে আমি আগে বলবো যে, আপনি আইনজীবি হিসেবে কেমন ? কারণ এটার সাবজেক্ট ম্যাটার খেলা হতে পারে, কিন্তু দিনশেষে এটা আইনের জটিল মারপ্যাচ ছাড়া কিন্তু আর কিছুই না।

# আপনার প্র্যাকটিসের পাশাপাশি লেখালেখির অভ্যাস আছে। ইনফ্যাক্ট, আপনার একটা কাজের উপর ভিত্তি করেই WADA (World Anti Doping Agency) তাদের নিজস্ব কিছু রুল ফরমুলেট করেছে।  প্র্যাকটিস এবং কাজের এত ব্যস্ততার পরও লেখালেখি মানে রিসার্চের জন্য কিভাবে সময় বের করেন?

জোনাথান টেইলর – এর জন্য আমাকে আমার সবগুলো উইকএন্ড এবং ছুটিকে কাজে লাগাতে হয়েছে। দিনরাত কাজ করতে হয়েছে এবং খুব কঠোরভাবে কাজটাকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হয়েছে।

# তাহলে প্রফেশনের জন্য কি ফ্যামিলি লাইফে কিছুটা হ্যাম্পার হয় না?

জোনাথান টেইলর – তা তো হয়ই। আমার মাঝে মধ্যেই মনে হয়, পরিবারের সাথে আরো কিছুটা সময় কাটালে ভালো হতো। আমার বাচ্চারা বড় হয়ে যাচ্ছে, ওদের সাথে সময় কাটাতেও ইচ্ছে করে। কিন্তু যখন তুমি কাজকে সামনে দেখবে, তখন তোমাকে চিন্তা করতে হবে। যদি সেরাদের কাতারে নিজেকে নিয়ে যেতে চাও, তখন বেশ কিছু জায়গায় ছাড় দিতেই হবে, স্যাক্রিফাইস লাগবে। পরিবার বনাম কাজ, আমার জন্য আমি কাজকেই বেছে নিয়েছি।

# স্পোর্টস ল বা মিডিয়া ল এই বিষয়গুলোতে সবসময়ই একটা স্পটলাইট থাকে, মিডিয়ার আগ্রহ থাকে, জিনিসটার কনটেন্টের কারণে এবং সুপারস্টারদের উপস্থিতির কারণে। আইনজীবি হিসেবে প্রফেশনালিজমে এটা কতটুকু বাঁধা দেয়?

জোনাথান টেইলর – কিছুটা তো দেয়ই, তবে সবসময় মনে রাখতে হবে, একজন আইনজীবির জন্য স্পটলাইট কখনো কাম্য নয়। এখানে মিডিয়ার আগ্রহ বেশি কারণ তোমার ক্লায়েন্ট সুপারস্টার, তুমি তো নও। এটা সবসময় মাথায় রাখতে হবে। একারণে আমাকে কোন প্রোগ্রামে বা টিভিতে যদি কোন বিশেষ কিছু নিয়ে বলতে বলা হয়, যেটার সাথে আমি জড়িত, তাহলে আমি সেখানে যাই না। অন্য কোন ক্ষেত্রে হলে ঠিক আছে। একজন আইনজীবির নিজের পাবলিসিটি খুবই দরকার, সুযোগ পেলে আমিও করি তবে সেটা সবসময় নয়।

# আপনি কি মুভি দেখার সময় পান?

জোনাথান টেইলর – যখন প্লেনে থাকি, শুধুমাত্র তখনই। জেমস বন্ডের মুভি দেখলাম এবার।

# আর গান?

জোনাথান টেইলর – বিটলসের গান ভালো লাগে।

# জেমস বন্ডের স্কাইফলে তো এডেল (Adele) প্লে ব্যাক করলো, ওর গান কেমন লাগে ?

জোনাথান টেইলর – আমার ভালোই লাগে। তবে আমার মেয়েরা বলে, এডেল ‘বোরিং’ !

# লিগ্যাল মুভিগুলা কেমন লাগে ? ধরেন, টুয়েলভ এংরি মেন।

জোনাথান টেইলর – খুবই ভালো মুভি। আমি সাধারণত লিগ্যাল মুভিগুলো বেশি পছন্দ করি।

# স্যার, শেষ প্রশ্ন। আপনি অসংখ্য মামলা নিয়ে কাজ করেছেন, অনেক সেলিব্রেটিদের সাথে আইনি লড়াই করেছেন। এদের মধ্যে আপনার মনে সবচেয়ে বেশি দাগ কেটেছে কে? বা কোন মামলাটা ??

জোনাথান টেইলর – প্রচুর মামলা নিয়ে কাজ করেছি, সবগুলো থেকেই শিখেছি। চেলসির সাথে কাজ করার সময় একবার জোসে মরিনহোকে আদালতে নিয়ে এসেছিলাম সাক্ষ্য দিতে, সেটাও ভালো ছিল। তবে সালমান বাট, আমির এবং আসিফের মামলাটা ছিলো খুবই সিগনিফিক্যান্ট। এ মামলায় অনেক উত্তেজনা-আগ্রহ ছিলো সবার।

# সেখান থেকেই তো স্পট ফিক্সিং জিনিসটা সবার নজরে আসে।

জোনাথান টেইলর – দেখো ক্রিকেটে ফিক্সিং জিনিসটা খুবই ক্রিটিক্যাল একটা বিষয়। এটা অনেকটা পোকাধরা আপেলের মত, তুমি কামড় না দেওয়ার আগ পর্যন্ত বুঝতেই পারবে না যে ভেতরটা কতটুকু বিষাক্ত। বাইরে থেকে কিছুই বোঝার উপায় নেই, কিন্তু একবার যখন তুমি জিনিসটা ফেস করবে, এরপর সব আপেলের দিকেই তুমি সন্দেহগ্রস্থ হয়ে তাকাবে। এ কারণে ক্রিকেটে ফিক্সিং এর শাস্তি খুবই গুরুতর, এবং সেটা হওয়াই উচিত।

# স্যার, অসংখ্য ধন্যবাদ আমাকে সময় দেওয়ার জন্য !!!

জোনাথান টেইলর – তোমাকেও ধন্যবাদ !!!

—————————————————————————–

২) ব্যারিস্টার ইয়াসিন প্যাটেল

YP

একজন লোক অপরাধ করতে পারে, কিন্তু তার শাস্তিটা যেন যথার্থ হয়। আমি দশজন দোষী লোকের ছাড়া পেয়ে যাওয়া এক্সেপ্ট করতে পারি, কিন্তু একজন নির্দোষ লোকের অকারণে সাজা পাওয়াটা মেনে নেব না। ইটস অল অ্যাবাউট ফেয়ারনেস।

# স্যার, নতুন লইয়ার হিসেবে প্র্যাকটিসে ঢুকতে গেলে তাদের প্রতি আপনার সাজেশন কি থাকবে?

ইয়াসিন প্যাটেল – আমার প্রথম কথা হচ্ছে, এখানে তোমাকে অনেক স্ট্রাগল করতে হবে। আমি জানি না তোমাদের দেশে সিস্টেমটা কি রকমের, কিন্তু ইউকে’তে প্রচুর স্ট্রাগল করে উঠে আসতে হয়। এবং খরচের বিষয়টাও মাথায় রাখতে হবে। প্রথম দিককার সময়গুলোতে তোমার আয় হবে খুবই কম, সেক্ষেত্রে তোমাকে নির্ভর করতে হবে আগের সেভিংসের উপর। আর আরেকটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে, প্র্যাকটিকাল অভিজ্ঞতা। ছাত্র অবস্থায় কোন ধরণের প্র্যাকটিকাল অভিজ্ঞতা পরবর্তীতে প্রফেশনে খুবই সাহায্য করবে। আর খুব ভালো ম্যানেজমেন্ট জানতে হবে। টাইম ম্যানেজমেন্ট, ক্লায়েন্ট ম্যানেজমেন্ট যদি তুমি করতে জানো, ইউ আর গ্রেট ইন দিস প্রফেশন।

# লইয়ারদের পড়াশোনার মাত্রাটা আসলে কি ধরনের হওয়া উচিত?

ইয়াসিন প্যাটেল – পড়াশোনার কোন বিকল্প নেই। লিগ্যাল রিসার্চ তো থাকবেই, কিন্তু একজন আইনজীবীর সব বিষয়ে জানাশোনা থাকা প্রয়োজন, এমনকি সেটা যদি আইন সংক্রান্ত বিষয় নাও হয়। যেমন ধর, তোমাদের দেশের এখনকার রাজনীতির হালচাল কিন্তু আমি জানি ! ভালোমানের দু’চারটা নিউজপেপার নিয়মিত পড়াটা জরুরী।

# আপনি এইভাবে বাংলাদেশে এসে কাজ করছেন, হরহামেশা অন্য দেশেও যেতে হচ্ছে। সেক্ষেত্রে কি ফ্যামিলিতে কিছুটা চাপ পড়ে না?

ইয়াসিন প্যাটেল – কিছুটা তো পড়েই। আমার ওয়াইফ এ কারণে বাসায় আমাকে সবকিছু থেকে দূরে রাখতে চেষ্টা করে। তবে আবারো বলছি, এখানেও ম্যানেজমেন্ট। তোমাকে কাজ এবং ফ্যামিলির মধ্যে ব্যালেন্স রাখতে হবে।

# স্যার, একটু ওপেন প্রশ্ন করি। আপনি ক্রিমিন্যাল ডিফেন্স আইনজীবি হিসেবে কাজ করছেন। আমি যদি খোলা চোখে দেখতে পাই, একটা লোক সুস্পষ্ট অপরাধী। তাহলেও কি আমি তাকে ডিফেন্ড করবো? এথিক্যাল পয়েন্ট অফ ভিউ থেকে কি একটু………

ইয়াসিন প্যাটেল – ডিফেন্স লইয়ার হিসেবে আমার প্রধাণ কাজ হচ্ছে বিচারে ফেয়ারনেস প্রতিষ্ঠা করা। তুমি দেখবে আমি ফেয়ারনেস কথাটা খুব বেশি ব্যবহার করছি। কারণ এটাই সব !! একজন লোক অপরাধ করতে পারে, কিন্তু তার শাস্তিটা যেন যথার্থ হয়। আমি দশজন দোষী লোকের ছাড়া পেয়ে যাওয়া এক্সেপ্ট করতে পারি, কিন্তু একজন নির্দোষ লোকের অকারণে সাজা পাওয়াটা মেনে নেব না। ইটস অল অ্যাবাউট ফেয়ারনেস। তবে হ্যা, ব্রিটেনেও অনেক আইনজীবি আছেন যারা খুনী, ধর্ষক বা চিহ্নিত অপরাধীদের পক্ষে লড়তে রাজী হন না। এটা আসলে সম্পূর্ণ নিজের ব্যাপার। তুমি যদি মনের ইচ্ছার বিরুদ্ধে কোন কাজ কর তাহলে তুমি শান্তি পাবে না। আর দিনে বারো চৌদ্দ ঘন্টা খাটাখাটনির পর যদি তুমি কাজ করে শান্তিই না পাও, তাহলে লাভ কি !!

# আপনার একটা ক্রিকেট ক্লাব আছে, এমনকি আপনি গুজরাতের মেট্রোপলিটান ক্রিকেট লীগেও প্যাট্রনাইজ করেন। একজন ব্যস্ত আইনজীবির কি এধরণের শখ থাকতে পারে ?

ইয়াসিন প্যাটেল – হ্যা, আমার একটা ক্লাব আছে এবং আমি মাঝে মাঝে খেলতেও নেমে যাই, আর গুজরাতের ঐ ক্রিকেট লীগকে আমি লিগ্যাল সাপোর্ট দেই। একজন আইনজীবির অবশ্যই শখ থাকতে পারে, এবং শত ব্যস্ততার মাঝেও সে সেই শখের জন্য সময় বের করে নিতে পারে। ঐ যে বললাম, ম্যানেজমেন্ট। সেটাই খুব গুরুত্বপূর্ণ।

# স্যার, শেষ প্রশ্ন। আপনি অসংখ্য মামলা নিয়ে কাজ করেছেন, এদের মধ্যে আপনার মনে সবচেয়ে বেশি দাগ কেটেছে কে? বা কোন মামলাটা ??

ইয়াসিন প্যাটেল – অনেক মামলার মধ্যে আমার সালমান বাটের কথাই বিশেষ মনে পড়ে। কারণ সেটা ছিলো একটা পুরো নতুন ধরণের একটি ঘটনা। আর ওখানে আমি ছাড়া সালমানের আর কোন বন্ধুও ছিলো না।

# সেই মামলার প্রক্রিয়া নিয়ে আপনি সন্তুষ্ট? মানে ন্যায়বিচার হয়েছে?

ইয়াসিন প্যাটেল – মামলার প্রসেস এবং অন্য সবকিছু ফেয়ার ছিল; কিন্তু এই ধরণের মামলা সেটিই ছিল প্রথম, তাই সেটার গুরুত্বও অন্যরকম।

# স্যার, অসংখ্য ধন্যবাদ আমাদের সময় দেওয়ার জন্য !!!

ইয়াসিন প্যাটেল – তোমাকেও ধন্যবাদ !!!